নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : শারদীয় দুর্গোৎসবের মহাষ্টমীর দিনে দেশের বিভিন্ন স্থানে কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়েছে। নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়াস্থ ঐতিহ্য সম্বলিত রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম মন্দিরে কুমারী পূজা দেখতে রীতিমতো ভক্তদের ঢল নামে।
আগামীকাল বুধবার শারদীয় দুর্গোৎসবের মহানবমী পালন করা হবে। মণ্ডপে মণ্ডপে বাজবে বিদায়ের সুর। আগামী বৃহস্পতিবার বিজয়া দশমীর মধ্য দিয়ে শেষ হবে শারদীয় উৎসব।
সনাতন ধর্মাবলম্বীরা মঙ্গলবার কুমারী পূজায় আশীর্বাদ ও প্রার্থনা করতে নারায়ণগঞ্জ পূজামণ্ডপসহ দেশের জেলা-উপজেলা শহরের মণ্ডপে মণ্ডপে ভিড় করেন।
কুমারী পূজা দেখতে সকাল থেকেই রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম মন্দিরে ভিড় জমান হাজার হাজার পুণ্যার্থী। কড়া নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে দীর্ঘ লাইন ধরে প্রবেশ করতে হয়েছে এখানে। দুর্গা ভক্তরা কুমারী মায়ের আরাধনায় মণ্ডপের সামনে উলুধ্বনি দিয়েছেন। ঢাকের বাদ্য, শঙ্খধ্বনিতে পুরো মঠ, মিশন এলাকায় ছড়িয়ে যায় শারদীয় দুর্গোৎসবের আমেজ।
মন্দিরে মন্দিরে অঞ্জলি আর কুমারী পূজার আয়োজনে সুগন্ধি চন্দন, পুষ্পমালা, ধূপদীপের সমারোহে উদযাপিত হয়েছে মহাষ্টমীর অর্চনা। গঙ্গাজল, শুদ্ধ বস্ত্র আর পুষ্পাঞ্জলি মন্ত্র- নিয়ে সবার মঙ্গল কামনায় মন্ত্র পাঠের মধ্য দিয়ে চলে অঞ্জলি দেয়ার আচার আচরণ।
কুমারী পূজার বৈশিষ্ট্য হলো- কুমারীকে পূজা করার সময় দেখা হয় না তার ধর্ম, জাত-পাত। এখনো ঋতুবতী হয়নি, এমন ১ থেকে ১৬ বছর বয়সি যে-কোনো মেয়েই কুমারীরূপে পূজিত হতে পারে।
দেবীদূর্গা সব নারীর মধ্যে মাতৃরূপে আছেন, এ উপলব্ধি সকলের মধ্যে জাগ্রত করার জন্যই কুমারী পূজা অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। ষোলো বছর পর্যন্ত কুমারীর মধ্যে মাতৃভাব প্রতিষ্ঠাই এ পূজার মূল লক্ষ্য। পরে অনুষ্ঠিত সন্ধিপূজায় ১০৮টি মাটির প্রদীপ ও ১০৮টি পদ্মফুল উৎসর্গ করে দেবীর পূজা করা হয়।
কুমারী পূজা হলো এক বিশেষ ধরনের পূজা, যে পূজায় এক কিশোরী কন্যাকে দেবীর আসনে বসিয়ে মাতৃরূপে পূজা-অর্চনা করা হয়। শঙ্খের ধ্বনি, কাঁসর ঘণ্টা, ঢাকের বাদ্য, উলুধ্বনির মধ্য দিয়ে কুমারী মাকে পুষ্পমাল্য পরিয়ে দেয়া হয়। অষ্টমী তিথির পূজা শেষে হয় কুমারী পূজা।
এবছর কুমারী দৈবীরূপে নারায়ণগঞ্জ রামকৃষ্ণ মিশন আশ্রম মন্দিরে ছিলেন, সাংবাদিক কন্যা শ্রীমতী জয়শ্রী ভট্টাচার্য (৭)। তাহার পিতা- সিনিয়র ফটো সাংবাদিক শ্রী পাপ্পু ভট্টাচার্য এবং মাতা- শ্রীমতী স্বর্ণা ভট্টাচার্য। কুমারীদেবী জয়শ্রী আইডিয়াল স্কুলের ২য় শ্রেণির ছাত্রী। তারা সপরিবারে নগরীর দেওভোগ এলাকায় বসবাস করেন।
মূলত কুমারী পূজার ১৬ উপকরণ দিয়ে পূজার আনুষ্ঠানিকতার সূত্রপাত। শুরুতেই গঙ্গাজল ছিটিয়ে কুমারী মাকে পরিপূর্ণ শুদ্ধ করে তোলা হয়। এরপর কুমারী মার চরণ যুগল ধুয়ে তাকে বিশেষ অর্ঘ্য দেওয়া হয়। অর্ঘ্যের শঙ্খপাত্র সাজানো হয় গঙ্গাজল, বেল পাতা, আতপ চাল, চন্দন, পুষ্প ও দূর্বা ঘাস দিয়ে। অর্ঘ্য দেওয়ার পর দেবীর গলায় পরানো হয় পুষ্পমাল্য। এরপর অগ্নি, জল, বস্ত্র, পুষ্প ও বায়ু এই পাঁচ উপকরণ দেওয়া হয় ‘কুমারী’ পূজাতে।
শাস্ত্রমতে, কোলাসুরকে বধ করার মধ্য দিয়ে কুমারী পূজার উদ্ভব। গল্পে বর্ণিত রয়েছে, কোলাসুর এক সময় স্বর্গ-মর্ত্য অধিকার করায় বাকি বিপন্ন দেবগণ মহাকালীর শরণাপন্ন হন। সেই সব দেবগণের আবেদনে সাড়া দিয়ে দেবী পুনর্জন্মে কুমারীরূপে কোলাসুরকে বধ করেন। এরপর থেকেই মর্ত্যে কুমারী পূজার প্রচলন হয়।