নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : সনাতন ধর্মাবলম্বীদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা আগামী ২৭ জুন অনুষ্ঠিত হবে।
এ উপলক্ষে শুক্রবার ২০ জুন বিকাল ৫টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের চাষাড়াস্থ শ্রী শ্রী গোপাল জিউর বিগ্রহ মন্দির প্রাঙ্গণে নারায়ণগঞ্জে শ্রী শ্রী জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা উৎসব সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের উদ্যোগে মত বিনিময় সভা অনুষ্ঠিত হয়।
নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা সাংবাদিক শংকর কুমার দে এর সভাপতিত্বে ও সাধারণ সম্পাদক শিখণ সরকার শিপনের সঞ্চালনায় মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান।
প্রধান বক্তা হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এডভোকেট আবু আল ইউসুফ খান টিপু, বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি এডভোকেট সরকার হুমায়ূন কবির।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির আহবায়ক এড. সাখাওয়াত হোসেন খান বলেন, বাংলাদেশে আমরা সবাই বাংলাদেশী। এখানে আমরা ধর্মের মাধ্যমে কোনো ভেদাভেদ করতে চাই না। আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান আমাদেরকে একটি নির্দেশনা দিয়েছে ধর্মবর্ণ নির্বিশেষে সকলের মন জয় করতে হবে। আমরা সেই নির্দেশনা মেনে কিন্তু আপনাদের পাশে আছি এবং থাকবো। আমরা চাই সুন্দর নারায়ণগঞ্জ। এই সুন্দর নারায়ণগঞ্জে এখানে সংখ্যালঘু বলতে কোন শব্দ থাকবে না। আর আমরা চাইবো না বাংলাদেশের সংখ্যালঘু বলতে কোন শব্দ থাকুক।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ একটি কথা প্রচলন আছে যে হিন্দু সম্প্রদায়ের সম্পত্তি দখল করেছে অনেকই। কিন্তু আমি বলতে চাই বিএনপির কয়জন লোক হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়ি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দখল করেছে আপনারা দেখবেন এমন বিচার করবেন আর আওয়ামী লীগের লোকেরা জন্য সম্পত্তি দখল করেছে তা আপনারা কিন্তু দেখেছেন। হিন্দু সম্প্রদায়ের মন্দিরের পাশাপাশি সেখানে হিন্দু ধর্মীয় শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করার ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে এবং শহরের দেওভোগের জিউস পুকুর সংস্কার করে সেখানে ধর্মীয় উপাসনা করতে পারে, যেন সকলে ব্যবহার করে সেই উপযোগী করে তোলার জন্য কাজ করা। কোন ব্যক্তি যদি ধর্ম শিক্ষা পুরোপুরি গ্রহণ করতে পারে তাহলে সে কোন খারাপ কাজে লিপ্ত থাকতে পারবে না। আপনারা জানেন কত ১৬ সালের নির্বাচনে আমি মেয়র পদে দলীয় মনোনয়ন নিয়ে অংশগ্রহণ করেছিলাম সেই নির্বাচনে একটি ইশতেহার মধ্যে বলেছিলাম আপনাদের হিন্দু সম্পদের ভাই-বোনদের জন্য।
আমাদের নেতা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বলছে শুধু হিন্দু সম্প্রদায় নয় সকল সম্প্রদায় যদি আমাদেরকে ভোট দিয়ে নির্বাচিত করে আর বিএনপি ক্ষমতায় আসলে বাংলাদেশকে একটি অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ হিসাবে গড়ে তুলা হবে। সকল সম্প্রদায় নিজ নিজ ধর্ম সঠিকভাবে পালন করতে পারবে।
প্রধান বক্তার বক্তব্যে মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু বলেন, সকলের আত্মত্যাগের বিনিময়ে আমরা এই স্বাধীন বাংলাদেশ পেয়েছি। তাই এদেশে কোনো ধর্মীয় বিভক্তি থাকতে পারে না। আমরা সকল ধর্মের মানুষ মিলে মিশে এই দেশে বসবাস করবো। যারা বিভক্তি সৃষ্টির চেষ্টা করবেন, আমরা মনে করবো তারা ফ্যাসিস্টের দোসর। ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে আমাদের অভিভাবক তারেক রহমান আমাদের নির্দেশনা দিয়েছেন হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টানসহ সকল সম্প্রদায়ের মানুষের পাশে দাঁড়াতে। আমরা জোরালো ভবে বলতে চাই, সে সময়ে নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি ও অঙ্গ সংগঠনের নেতাকর্মীরা আপনাদের প্রতিটি মন্দির, বাড়ি-ঘর এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পাহারা দিয়েছে। আপনাদের যে কোনো সমস্যার কথা শুনলে দৌড়ে ছুটে গিয়েছে। পুরো অনুষ্ঠানের একটা রোড ম্যাপ তৈরি করা হবে। সে অনুযায়ী আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপি নেতাকর্মীরা আপনাদের পাশে থেকে অনুষ্ঠানকে সফল করতে সহায়তা করবে। পতিত আওয়ামী লীগ সরকার এ দেশে হিন্দুদের সম্পত্তি দখল করেছে, হিন্দুদের নির্যাতন করেছে কিন্তু বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া এবং ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে আমরা আপনাদের পাশে আছি। আপনারা নিশ্চিন্তে আপনাদের সকল ধর্মীয় উৎসব পালন করবেন। আগামী ২৭ জুন অনুষ্ঠিতব্য জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা অনুষ্ঠানও জাঁকজমকপূর্ণভাবে আয়োজন করুন। আপনারা রবিবারে জেলা প্রশাসকের কাছে আসুন, আমরাও থাকবো।
মতবিনিময় সভায় নারায়ণগঞ্জ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক শিখন সরকার শিপন উপস্থিত রথযাত্রা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্দিরের প্রতিনিধিগণকে উদ্দেশ্যে বলেন, শ্রী শ্রী জগন্নাথ রথযাত্রা উপলক্ষে নারায়ণগঞ্জের সবকটি রথ যেন একই সময়ে বের করা হয় যাতে করে সুশৃংখলভাবে সুন্দর এবং উৎসবমুখর পরিবেশে অনুষ্ঠানটি আয়োজন করা যায়। একেক স্থান থেকে একেক সময় বের করা হলে শহরে যানজটসহ নানাবিধ বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। তাই বিকেল তিনটায় সবাই একসাথে রথ বের করবেন এবং বিকেল পাঁচটার মধ্যে শেষ করবেন। অনুষ্ঠানটি সুন্দরভাবে আয়োজনের লক্ষ্যে প্রশাসনের সার্বক্ষণিক নজরদারি থাকবে, পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর পূজা উদযাপন পরিষের উদ্যোগে নিজস্ব ভলান্টিয়ার নিয়োগ করা হবে।
অনুষ্ঠানে এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন, মহাতীর্থ লাঙ্গলবন্দ অষ্টমী পূর্ণ স্নান উদযাপন পরিষদের সভাপতি সরোজ কুমার সাহা, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্ট সাবেক ট্রাস্টি পরিতোষ কান্তি সাহা, লাঙ্গলবন্দ স্নান উৎসব উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক তাপস কর্মকার, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্ট কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক সঞ্জিব কর্মকার জয়, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বিষ্ণপদক সাহা, সাধারণ সম্পাদক সুশীল কুমার দাস, সহ- সভাপতি সাংবাদিক উত্তম কুমার সাহা, জেলা কমিটির সহ- সভাপতি তিলোত্তমা দাস, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক শ্যামল বিশ্বাস, মহানগর হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নিমাই চন্দ্র দে, মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সাংগঠনিক সম্পাদক কৃষ্ণ আচার্য সহ জগন্নাথ দেবের রথযাত্রা সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন মন্দির প্রতিনিধিবৃন্দ এবং সনাতন ধর্মাবলম্বী নেতৃবৃন্দ।