4 Srabon 1432 বঙ্গাব্দ ০৯-১২-২০২২
Home / জাতীয় / এ সরকারের শাসনামলেই গণহত্যার বিচার কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশাকরি- উপদেষ্টা আসিফ নজরুল 

এ সরকারের শাসনামলেই গণহত্যার বিচার কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশাকরি- উপদেষ্টা আসিফ নজরুল 

নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের শহীদদের স্মৃতি স্মরণে বাংলাদেশের প্রথম স্মৃতি স্তম্ভ নারায়ণগঞ্জে “জুলাই শহীদ স্মৃতিস্তম্ভ” এর শুভ উদ্বোধন করেন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের মাননীয় ৫জন উপদেষ্টাবৃন্দ।
সোমবার ১৪ জুলাই বিকাল ৩ টায় নারায়ণগঞ্জ শহরের  হাজ্বীগঞ্জ মোড় এলাকায় নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে ২৪’র গণঅভ্যুত্থানে নিহত ২১ জন শহীদের নাম উল্লেখ করে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মান করা হয়।
স্মৃতিস্তম্ভের ফলকে উল্লেখ করা ২১ জন শহীদদের নাম যথাক্রমে, রিয়া গোপ, মোঃ রোমান, আরমান মোল্লা, মোঃ ইরফান ভূইয়া, মোঃ তুহিন, মোঃ মোহসীন, মোঃ জনি, ইব্রাহিম, মোঃ স্বজন, মোঃ আদিল, পারভেজ হাওলাদার, মোঃ ফারহানুল ইসলাম ভূঁইয়া, সোলেমান, ইমরান হাসান, হযরত বিল্লাল, সফিকুল, মোঃ সজল, মোঃ মাবরুর হুসাইন, মোঃ মাহামুদুর রহমান খান, মোঃ সাইফুল হাসান ও আহসান কবির।
উপদেষ্টাগণ জুলাই গণ-অভ্যুত্থান স্মরণে নির্মিত স্মৃতিস্তম্ভে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এসময় নিহত জুলাই যোদ্ধা পরিবারের সদস্যরা বক্তব্য রাখার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়লে এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়।

আইন, বিচার ও সংসদ বিষয় মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল বলেন, গত ১৫ বছর যে স্বৈরাচারী শাসক ছিলো এই জুলাই মাসেই ৩৬ দিনে নয় মাত্র ১৫ দিনেই সেই স্বৈরাচারী শাসককে উৎখাত করে বিতাড়িত করে। আপনাদের মনে প্রশ্ন থাকতে পারে, দেশে এত বড় একটি জঘন্য, নির্মম, বিভৎস হত্যাকান্ড হলো এর বিচার কোথায়। আমি আপনাদের জানাতে চাই, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে যেভাবে বিচার কাজ এগিয়ে চলেছে তাতে করে আমাদের এ সরকারের শাসনামলেই আমরা গণহত্যার বিচার কাজ শেষ করতে পারবো বলে আশাকরি। নারায়ণগঞ্জের পুলিশ সুপার আমাকে জানিয়েছেন, ৫ আগষ্টের আগে কিছু মামলার চার্জশিট দিয়ে দিবে। চার্জশিট দেয়ার পর প্রয়োজনে আমরা দ্রুত বিচার আইনের মাধ্যমে বিচার করবো। আমি এখানে এসে জানতে পেরেছি, মামলা করার কারনে অনেকে হয়রানীর শিকার হচ্ছে। স্থানীয় প্রশাসনকে বলবো এ বিষয়গুলো কঠোর নজরদারীতে রাখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, জুলাইতে কেনো আমরা বিজয়ী হয়েছিলাম, কারন ফ্যাসিস্টদের ছাড়া সারাদেশের মানুষ একটি পরিবার হয়েগিয়েছিলাম। আমাদের সেই পরিবার, সেই ঐক্যকে ধরে রাখতে হবে। আমরা বৈষম্যহীন, শোষনহীন একটি বাংলাদেশ গড়তে চাই, যেখানে প্রকৃত গণতন্ত্র থাকবে। যেখানে কোন শাসক অপশাসকে পরিণত হবেনা। আপনাদেরকে অনুরোধ করবো, বর্তমান সময়ে বিভিন্ন স্থানে চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী, নির্মম হত্যাকান্ডের মত ঘটনা ঘটছে। যেভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকে ফ্যাসিস্টদের বিতাড়িত করেছেন ঠিক সেভাবে ঐক্যবদ্ধ থেকে এসকল চাঁদাবাজ, সন্ত্রাসীদের রুখে দেওয়া সম্ভব।
গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খান বলেন, বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদী, মুজিববাদী শাসনের বিরুদ্ধে দীর্ঘ সাড়ে ১৫ বছর যে সংগ্রাম চালিয়েছিলো তাতে বহু মানুষ গুম হয়ে যায়। বিচার বহিঃর্ভূত নির্বাচন ও হত্যাকান্ডের শিকার হয়। আয়নাঘর তৈরি করা হয়েছিলো। সেই সংগ্রামের একটা পর্যায়ে বাংলার তরুন সমাজ রাস্তায় নেমে এসে সারাদেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে। ৩৬ দিনের সেই অগ্নিঝড়া পথ পেরিয়ে আগষ্টের ৫ তারিখে বিজয় এসেছিলো। বর্তমান সরকার গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে আসা সরকার। গণভবনকে ফ্যাসিবাদ বিরোধী জাদুঘর হিসেবে গড়ে তোলার কাজ চলছে। আমরা সেটাকে ফ্যাসিবাদের ঠিকানা হিসেবে সংরক্ষন করতে চাই। আমরা দেখাতে চাই কিভাবে ফ্যাসিবাদীরা মানুষদের অত্যাচার, নির্যাতন করতো। এছাড়াও শহীদদের সমস্ত কবরগুলো সংরক্ষণের বিষয়েও কাজ চলছে। সবগুলো কাজ আমরা ৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে শেষ করতে চাই তবে আমাদের সংগ্রামের ধারা আমরা শেষ করতে পারবোনা সেটা আপনাদের কাছে দিয়ে যেতে চাই।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রনালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বক্তব্যে বলেন, একটি স্বাধীন দেশে যৌক্তিক আন্দোলনে নির্বিচারে গুলি চালানো হয়েছে। যারা আন্দোলনের সাথে সম্পৃক্ত ছিলো তারা স্বপ্ন দেখেছিলো এ দেশকে বৈষম্যহীন দেখার। এর প্রকৃত অর্থ হচ্ছে দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা। কেনো আমাদের বিজয় আসছে, কারন যারা এবার লড়াই করেছে তারা মনের ভিতর একবিন্দু ভয়কে প্রশ্রয় দেয়নি। যখন তারা দেখেছে তাদের বন্ধুদের গুলি করা হয়ছে তখন তারা নির্বিক হয়ে গেছে। তারা নিজের বা পরিবারের চিন্তা করেনি। বিচারের জন্য দেশটাকে বৈষম্যহীন করার জন্য ঐভাবে করে আত্মত্যাগ করেছে। যদি তারা নির্বিক না হতো ও আত্মত্যাগ না করতো তাহলে আমাদের এ বিজয় আসতোনা।

উদ্বোধন অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. চৌধুরী রফিকুল আবরার, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান। এছাড়াও সচিবালয়ের বিভিন্ন দপ্তরের সচিব পদমর্যাদার কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের সার্বিক ভাবে নির্বিঘ্নে করিতে যিনি অক্লান্ত পরিশ্রম করেছেন নারায়ণগঞ্জ জেলার সুযোগ্য জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলাম মিঞা এবং আইন শৃঙ্খলা বিষয়ে নিরাপত্তার চাদরে যিনি ঢেকে রেখেছেন পুলিশ সুপার নারায়ণগঞ্জ প্রত্যুষ কুমার মজুমদারসহ আরও উপস্থিত ছিলেন, সিভিল সার্জন ডাঃ মশিউর রহমান, মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক এডভোকেট সাখাওয়াত হোসেন খান, সদস্য সচিব এড. আবু আল ইউসুফ খান টিপু, জেলা জামায়াতের সাবেক আমীর মাওলানা মাইনুদ্দিন আহমেদ, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ মহানগরের সভাপতি মুফতি মাসুম বিল্লাহ, গণসংহতি আন্দোলন বাংলাদেশ নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয়ক তরিকুল সুজন প্রমুখ। তাছাড়া অনুষ্ঠানে বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ জেলার সমন্বয় ও নেতৃবৃন্দ সহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীদের উপস্থিতি দেখা যায়।

আরও পড়ুন...

দেশ প্রেমের ব্রত নিয়ে নিজের কাজকে রোল মডেল হিসেবে করতে হবে- ডিসি জাহিদুল

নিউজ ব্যাংক ২৪. নেট : নারায়ণগঞ্জ জেলা পরিষদের আওতায় নতুন ঠিকাদারদের লাইসেন্স প্রদান অনুষ্ঠান জেলা …